IMF

IMF থেকে নতুন ঋণের পরিকল্পনা, থাকছে নতুন শর্তও

অর্থনীতি বাংলাদেশ সর্বশেষ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পাঁচ সদস্যের একটি দল আজ সোমবার ঢাকায় পৌঁছাবে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে এই প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক শুরু করবে। বৈঠকগুলোতে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন ঋণ অনুমোদন নিয়ে আলোচনা হবে।

এই বৈঠকে মূল আলোচনার বিষয় হবে কর আদায় বৃদ্ধি, ঋণ গ্রহণ কমানো এবং ভর্তুকি হ্রাস করা। তবে, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধির জন্যও আইএমএফ কিছুটা চাপ দিতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র থেকে।

বৈঠক শুরুর আগে গতকাল আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে ঢাকায় অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘আইএমএফ আমাদের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। তারা আমাদের বড় বাজেট সহায়তা দিয়ে থাকে। তাদের মিশন আসছে এবং আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে আইএমএফ থেকে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির বাইরে আরও ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই বিষয়ে আগেই কথা বলেছেন। নতুন ঋণের জন্য আলাদা প্যাকেজ ঘোষণা করা হতে পারে বলে অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

আইএমএফের প্রতিশ্রুত ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের মধ্যে ২৩৯ কোটি ডলার এখনও বাকি আছে, যা চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে। নতুন ঋণের আলোচনার ক্ষেত্রেও নতুন শর্ত থাকতে পারে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন ঋণ প্যাকেজে কর, ঋণ এবং ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার সংস্কারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আইএমএফের মিশন আগামীকাল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করবে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই বৈঠক চলবে।

সূত্র জানায়, আইএমএফ প্রতিনিধিরা মূলত বৈঠক করবেন অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। বৈঠকগুলোতে চলমান ঋণ কর্মসূচির শর্ত পূরণের অগ্রগতি এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে আলোচনা হবে। অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণ, ঋণের বিপরীতে সরকারি গ্যারান্টি, মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলপত্র বাস্তবায়ন এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ হ্রাসের বিষয়গুলোও আলোচনায় আসবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও সারের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে ভর্তুকি কমানোর বিষয়েও আলোচনা হবে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেটের আকার এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েও আইএমএফের সঙ্গে অর্থ বিভাগের আলোচনা হবে।

আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় কীভাবে রাজস্ব আয় বাড়ানো যায় এবং কর প্রশাসন কীভাবে ২০২৫ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হতে পারে, এসব বিষয়ও আলোচনার মধ্যে আসবে।

আগামী ২১ থেকে ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। জানা গেছে, ওই সময় আইএমএফের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠকে ঋণ কর্মসূচির আকার বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে। পরের মাসে, অর্থাৎ নভেম্বরে, আইএমএফের আরেকটি দল বাংলাদেশে আসবে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় পর্যালোচনা বৈঠক করতে।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এরপর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এবং ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। চলতি বছরের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে ১১৫ কোটি ডলার ছাড় হয়। তিনটি কিস্তিতে বাংলাদেশ ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। বাকী ২৩৯ কোটি ডলার ২০২৬ সালের মধ্যে আরও চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *